নতুন বছরে নতুন নাম পেল ঐতিহ্যবাহী প্রেক্ষাগৃহ ‘স্টার থিয়েটার’ (Star Theatre Name Change)। সোমবার সন্দেশখালিতে দাঁড়িয়ে এই নামবদলের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। মমতা ঘোষণা করলেন প্রেক্ষাগৃহের নতুন নাম ‘বিনোদিনী মঞ্চ’। প্রায় প্রায় ১৪০ বছরের এক নারীর লড়াই সম্মান পেল। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিকেলেই নামফলক বদল করে দেয় পুরসভা। স্টার থিয়েটারের নাম হবে ‘বিনোদিনী মঞ্চ’ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা শুনে কেঁদেই চলেছেন অভিনেত্রী রুক্মিণী মৈত্র (Rukmini Maitra)। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগে খুশি অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী (Sudipta Chakraborty)।
২০২৫ সালে মুক্তি পাবে রুক্মিণী অভিনীত রামকমল মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ‘বিনোদিনী:নটীর উপাখ্যান’। বিনোদিনী দাসীর জীবনের কাহিনীর উপর ছবি তৈরি করেছেন পরিচালক।আর বছরের শেষ হওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে আবেগঘন হয়ে পড়লেন অভিনেত্রী রুক্মিনী মৈত্র। রুক্মিণী বললেন, “দিদি ঘোষণা করার পর থেকে আমি শুধু কেঁদেই চলেছি। চোখের জল আটকে রাখতে পারছি না।”
বিনোদিনী হয়ে নাটকের মঞ্চে সবার মন কেড়ে নিয়েছেন অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। তাঁর অসাধারণ অভিনয়ে মুগ্ধ দর্শক থেকে সমালোচক। নাটকের শেষেই দর্শকদের সামনে সুদীপ্তা ও টিম অনুরোধ করেছেন স্টার থিয়েটারেক নাম পরিবর্তনের। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে নতুন বছরে স্টার থিয়েটারের নাম বিনোদিনী থিয়েটার। সুদীপ্তার কথায়, ”একটু আগেই খবরটা জানাল। আমরা গত ৩১টি অভিনয়েই এই দাবি রেখেছি, স্টার থিয়েটার যেন বিনোদিনীর নামে হয়। শুধু আমাদের দাবি নয়, সাধারণ মানুষও এই দাবিকে সমর্থন করেছেন। অবশেষে সেটা যে অবশেষে বাস্তবায়িত হল। দারুন বিষয়।
১৮৮৩ সালে স্থাপিত এই নাট্যমঞ্চের নেপথ্যের কারিগর ছিলেন বিনোদিনী দাসী। প্রসঙ্গত নটি বিনোদিনী সমাজের সকল স্তরের মানুষই তার অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। এই থিয়েটারে এককালে নাটক দেখতে যেতেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথঠাকুর-সহ একাধিক ব্যক্তিত্বরা। তার প্রশংসকদের তালিকায় ছিলেন রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র, ফাদার লাঁফো, এডুইন আরনল্ড, কর্ণেল অলকট প্রমুখ। রামকৃষ্ণদেব তার চৈতন্যলীলার অভিনয় দেখে তাকে গ্রীনরুমে গিয়ে চৈতন্য হোক বলে আশীর্বাদ করেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র তার উপন্যাসের চরিত্রগুলিকে বিনোদিনীর মধ্যে দিয়ে সফলভাবে গড়ে উঠতে দেখেছিলেন। তার অভিনয়ের গুরু গিরিশচন্দ্র ঘোষ তার বহু প্রশংসা করেছিলেন। বিনোদিনীর ত্যাগ স্বীকারে যে নতুন থিয়েটার তৈরি হয় বিনোদিনীর নাম তাতে থাকেনি। এই নতুন থিয়েটারের নাম হয় স্টার থিয়েটার। এই বিশ্বাসঘাতকতায় যখন বিনোদিনী দুঃখে বেদনায় মন ভেঙে পড়ে। ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে মাত্র ২২-২৩ বছর বয়েসে তিনি রঙ্গমঞ্চ ত্যাগ করে যান। তারপর দীর্ঘদিন জীবিত থাকলেও কখনও অভিনয়ে ফিরে আসেননি। ফলে বাংলা থিয়েটার বঞ্চিত হয় এক অসামান্য অভিনেত্রীর প্রতিভা এবং অভিনয় থেকে।যৌনকর্মীর সন্তান হওয়ার পর থেকে বারবার জীবনের নানা মুহূর্তে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন নটী বিনোদিনী। ১৮৮৩ সালে ৬৮ বিডন স্ট্রিটে নির্মিত হল থিয়েটার ভবন। কথা ছিল, বিনোদিনীর নাম অনুসারে তার নাম হবে বি থিয়েটার, কিন্তু গিরিশচন্দ্র ও অন্য পুরুষ অভিনেতাদের চক্রান্তে থিয়েটারটি ‘স্টার থিয়েটার’ নামে রেজিস্ট্রি হল। বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হলেন বিনোদিনী। কিন্তু আজকে থ্রেটের জগতের তারা অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্টার থিয়েটারের নাম বিনোদিনী থিয়েটার করার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সমস্ত স্তরের মানুষ। আজকেই স্টার থিয়েটারের নাম তুলে দিয়ে বিনোদিনী থিয়েটারের বোর্ড লাগানো হছে।